মার্ক জাকারবার্গ - ক্যারিয়ার টিপস

coollogo_com-14279347

ক্যারিয়ারে সফলতার জন্য সিভি লিখন, ভাইভা টিপস ও চাকুরীর খবর

Post Top Ad

মার্ক জাকারবার্গ

ইন্টারনেটে গড়ে উঠেছে সামাজিক সম্পর্কের শক্তিশালী এক নেটওয়ার্ক, যে নেটওয়ার্কে বসে হাজার হাজার মাইল দূরে থাকা আপন মানুষটির সঙ্গে মনের কথা বলা যায়। খুঁজে বের করা যায় হারিয়ে যাওয়া পুরোনো বন্ধুটিকে। সাইবার দুনিয়ায় সামাজিক যোগাযোগের সর্ববৃহৎ এই নেটওয়ার্কের নাম ‘ফেসবুক’। ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী হচ্ছেন মার্ক জাকারবার্গ। শৈশব থেকেই জাকারবার্গ পড়াশোনা ও কাজকর্মে ছিলেন চৌকস। কৈশোরেই ইংরেজির পাশাপাশি ফরাসি, লাতিন ও প্রাচীন গ্রিক ভাষায় কথা বলা ও লেখা রপ্ত করেন জাকারবার্গ। কম্পিউটারের প্রতি ঝোঁক থাকায় ১৯৯০ সাল থেকে নিজেই প্রোগ্রামিং শুরু করেন। যদিও জাকারবার্গ তখন মাত্র ছয় বছরের শিশু। ছেলেবেলা থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রাম ও ভিডিও গেম নিয়ে আগ্রহ ছিল জাকারবার্গের।

বারো বছর বয়সেই মার্ক জাকারবার্গ আটারি বেসিক ব্যবহার করে ‘জাকনেট’ নামে একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেন। তার পিতা অফিসে প্রোগ্রামটি ব্যবহার করতো, যাতে রিসেপশনিস্ট নতুন রোগীর বিষয়ে তাকে সহজেই জানতে পারে। এছাড়া পরিবারের সদস্যরাও বাসার মধ্যে যোগাযোগ করতে প্রোগ্রামটি ব্যবহার করতো। জাকারবার্গের কম্পিউটারের প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখে তার পিতা কম্পিউটারের গৃহশিক্ষক রাখেন।

মার্ক জাকারবার্গ যখন হাই স্কুলে পড়েন তখন, সংগীত সফটওয়্যার ‘প্যানডোরা’ তৈরি করেন, যা ‘সিনাপস’ প্রোগ্রামের প্রথম সংস্করণ। সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত মার্ক জাকারবার্গ উচ্চমাধমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন।

২০০২ সালে জাকারবার্গ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করার জন্য জাকারবার্গ হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘গো-টু ক্যাম্পাস সফটওয়্যার’ ডেভেলপার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। সে সময় জাকারবার্গ ‘কোর্স ম্যাচ’ নামক প্রোগ্রাম তৈরি করেন, যার সাহায্যে ছাত্রছাত্রীরা তাদের কোর্সের ভিত্তিতে ক্লাস নির্বাচন করতে পারত। এ বছরেই জাকারবার্গের ‘সিনাপস’ নামক প্রোগ্রামটি কেনার চেষ্টা করে মাইক্রোসফট। এই সফটওয়্যার ব্যবহারকারীর শোনার অভ্যাস লক্ষ্য করে এবং কী শুনতে চায় তা আগে থেকে অনুধাবন করার চেষ্টা করে। এই সময় জাকারবার্গকে মাইক্রোসফটের সঙ্গে যোগ দেবার অনুরোধ করা হয়। কিন্তু জাকারবার্গ হার্ভার্ডে পড়াশোনা করার সিদ্ধান্ত নেন।

Mark+Zuckerbergহার্ভার্ডে থাকা অবস্থায় ২০০৩ সালের ২৮ অক্টোবর জাকারবার্গ ‘ফেসম্যাশ ডটকম’ নামে একটি সাইট প্রতিষ্ঠা করেন। এই সাইটে দুটি ছবি পাশাপাশি রাখা হত। এই দুই ছবি থেকে ভিজিটররা কে ‘হট’ আর কে ‘হট না’ তা তুলনা করত। হার্ভার্ড কলেজের ডাটাবেজ হ্যাক করে স্টুডেন্টদের ছবি নিয়ে তা ফেসম্যাশে ব্যবহার করে ভিজিটরদের ‘হট’ অথবা ‘নট’ বের করার সুযোগ দেন জাকারবার্গ। প্রথমদিকে মাত্র ৪ ঘণ্টায় ৪৫০ ভিজিটর ২২০০০ ছবিতে অনলাইনের মাধ্যমে ভোট দেন। পরে কলেজের স্টুডেন্টরা এই সাইট বন্ধ করতে তাকে বাধ্য করে।

২০০৪ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি মার্ক জাকারবার্গ হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নকালীন তার রুমমেট এবং কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ের ছাত্র এডওয়ার্ডো সেভারিন, ডাস্টিন মস্কোভিতস এবং ক্রিস হিউজেসের সঙ্গে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন সামাজিক যোগাযোগ ওয়েবসাইট ‘দ্য ফেসবুক ডটকম’। ব্যবহারকারীরা এতে নতুন নতুন বন্ধু অ্যাড করা, বার্তা প্রেরণ, তাদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলী আপডেট ও তথ্য আদান প্রদান করতে পারত। ওয়েবসাইটটির সদস্য প্রাথমিকভাবে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু পরে সেটা বোস্টন শহরের অন্যান্য কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। আরো পরে এটি সব বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, হাই স্কুল এবং ১৩ বছর বা ততোধিক বয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

হার্ভার্ডে ফেসবুকের সাফল্য জাকারবার্গের এবং তার বন্ধুদের অনুপ্রেরণা বাড়িয়ে দেয়। তখন তারা সিদ্ধান্ত নেয় ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে অফিস নেয়ার। কারণ সিলিকন ভ্যালি হলো বিখ্যাত আইটি কোম্পানিগুলোর মধ্যমণি। বেশিরভাগ আইটি প্রতিষ্ঠান যেমন গুগল, ইন্টেল, এইচপি, ওরাকলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়। তাই জাকারবার্গ এবং তার বন্ধুরা হার্ভার্ডে পড়ালেখা ড্রপ দিয়ে পাড়ি জমান ক্যালিফোর্নিয়ায়।

২০০৫ সালে মার্কিন কলেজ এবং স্কুলগুলোতে ফেসবুকের জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে। আগস্টে জাকারবার্গ ‘দ্য ফেসবুক ডটকম’ নাম পাল্টে শুধু ‘ফেসবুক ডটকম’ রাখেন। বছর শেষে ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫ লাখে। ফেসবুকের জনপ্রিয়তা দেখে এ সময় ইয়াহু এবং এমটিভি নেটওয়ার্ক কোম্পানি ফেসবুক কিনতে চেয়েছিল এক বিলিয়ন ডলারে কিন্তু মার্ক জাকারবার্গ সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।

২০০৬ সালের প্রথম দিকে মার্কিন অফিস এবং পরবর্তীতে সর্বসাধারণের জন্য ফেসবুক উন্মুক্ত করা হয়। বছর শেষে ফেসবুকের ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় এক কোটি ২০ লাখ। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অন্য কোনো দেশে ফেসবুক তখনও একটি অপরিচিত নাম। ২০০৭ সালে ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা।

২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বিশ্বের বেশ কিছু দেশে সর্বপ্রথম ফেসবুক ব্যবহার শুরু হয়। প্রথমে কানাডা ও ব্রিটেন এবং পরবর্তীতে ফ্রান্স ও স্পেন। এপ্রিলে ফেসবুক চ্যাট চালু হয়। বছরের মাঝামাঝিতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১০ কোটি ছাড়িয়ে যায়। ২০০৯ সাল থেকে জাকারবার্গের ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা শুধু বাড়তেই থাকে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ধীরে ধীরে কার্যক্রম শুরু হয় এ সাইটের। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যেই ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ কোটি থেকে বেড়ে ৩৫ কোটিতে। ফেসবুকের কল্যাণে ২০০৯ সালে বিলিয়নার বনে যান মার্ক জাকারবার্গ। ফেসবুক ব্যবহারকারী সেই যে বেড়ে চলেছে, সেই ধারাবাহিকতা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে।

জাকারবার্গ ও তার ফেসবুক এমনই চমক দেখিয়েছেন যে, বর্তমানে আশেপাশে আপনি যাকে দেখবেন তারও ফেসবুক প্রোফাইল খুঁজে পাওয়া যাবে। মানুষ ফেসবুক থেকে নিউজ আপডেট নিচ্ছে, গ্রুপ তৈরি করে গুরুত্বপূর্ণ ডিসকাশন করছে, পেজ তৈরি করে শেয়ার করছে নানা রকম তথ্য। জীবনের সবকিছুই এখন ফেসবুকের সঙ্গে জড়িত। এখন আর কেউ ভাবে না, এটা না থাকলে কী হতো বা কাউকে জিজ্ঞাসাও করে না তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে নাকি। এটা হয়ে গেছে জীবনের অপরিহার্য অঙ্গ। অন্যদিকে ফেসবুকের নতুন নতুন অধিগ্রহণ বাড়াচ্ছে এর পরিধি। ইন্টারনেট

সফল যারা কেমন তারা